তপেন্দ্র নাথ মিশ্রর স্মরণে

 

তপেন্দ্র নাথ মিশ্র ২২শে নভেম্বর ২০২০ তে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন । উনি HCL এ যোগ দেন ১৯৬৩ সালের মার্চ মাসে এবং কর্ম ব্যস্ততা থেকে স্বেচ্ছা অবসর নেন ১৯৯৭ সালের ৩১এ মার্চ। মিশ্রবাবুর স্মৃতি রোমনথন করতে গিয়ে এক কথাতেই বলি আমার দেখা একজন ভাল, খাঁটি, নিষ্ঠাবান মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার। ১৯৮০ সালে HCL এ যোগদান করার পর প্রশিক্ষণ শেষে Unit-I এর মেইনটেনেন্স ডিপার্টমেন্টে পোস্টিং হোল মোহাম্মদ ইদ্রিস সাহেবের অধীনে । এখনও মনে আছে ইন্দ্রিস সাহেব প্রথমেই পরিচয় করিয়েছিলেন টি এন মিশ্র ও জে এন ঘোষের সঙ্গে । বললেন, দুই স্টলওয়ার্টসদের সঙ্গে আলাপ কর।পরে বুঝেছিলাম কথাটা কেন বলেছিলেন।

সকলেই প্রায় বলতেন মিশ্র বাবু একজন লেড প্রেস বিশেষজ্ঞ। প্রত্যেকদিন সকালে প্রথম কাজই ছিল ওনার, একবার ইউনিট পরিক্রমা করে দেখা রাতের শিফটে কোথাও কোন যন্ত্র বিকল হয়েছে কিনা। তারপর এক কাপ চা খেয়ে আবার কাজে লেগে পড়া। প্রায়ই দেখতাম মিশ্রবাবু ওনার দল নিয়ে তেল কালি মেখে যন্ত্রের সামনে দাড়িয়ে। খুব রাগাতাম এই বলে যে এমনই রক্ষনাবেক্ষন করছেন যে রোজই যন্ত্র খারাপ হচ্ছে । বাস্তবে মেশিনগূলো খুবই পুরোনো হয়ে গিয়েছিল । মিশ্র বাবুদের জন্যই মেশিন গুলো প্রত্যাশিত জীবনের চেয়ে অনেক বেশি কর্মক্ষম ছিল ।খুবই নিষ্ঠাবান লোক ছিলেন, কাজের ব্যাপারে কোন আপস করতেন না । আমি ঐ টিমে কাজ করতে পেরে ভাল কাজ শিখতে পেরেছিলাম। মিশ্র বাবু অনেক দেশীয় খুচরো যন্ত্রাংশের নকশা বানিয়ে ছিলেন ও তাতে প্রতিষ্ঠানের অনেক টাকা সাশ্রয় হত ।আমি ওনার সঙ্গে ৪ বছর কাজ করার পরে হায়দরাবাদ ইউনিটে চলে গেলেও যোগাযোগ ছিল। পরে কলকাতা থেকে টুরে রুপনারায়পুর গেলে ওনার বাড়ী যেতেই হত।

অবসর নেবার পর দমদমের কাছে থাকতেন। বৌদিও খুব ভাল মানুষ ছিলেন। বৌদি আগেই চলে গেছেন। পরে মেয়ে সোনার কাছে থাকতেন। চাকরি পরিবর্তন করাতে অনেকদিন দেখা না হলেও কঞ্জনের সুবাদে ঢাকুরিয়াতে আবার দেখা শুরু হয় বিভিন্ন সময়ে।সত্যিই একজন ভাল মানুষ চলে গেলেন। সকলকেই একদিন চলে যেতে হবে এটাই তো নিয়ম, কিন্তু মিশ্র বাবু ভালো মানুষ হিসেবে একটা দাগ রেখে গেলেন। ওনার আত্মার শান্তি কামনা করি।

সুপ্রকাশ কুন্ডু